মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সত্যবাদিতা মহৎ মানবিক গুণ

মো. আবদুর রহমান:
সত্যবাদিতা মানুষের মহৎ একটি গুণ। প্রকৃত ঘটনা যথাযথ প্রকাশ করাকে সত্যবাদিতা বলে। যে ব্যক্তির মধ্যে এ মহৎ গুণ আছে তাকে সাদিক বা সত্যবাদী বলে। সত্যবাদী লোকের কথা ও কাজে কোনো পার্থক্য থাকে না। সত্যবাদিতা মানুষকে খাঁটি সোনার মতো নিখাদ করে তোলে। একজন আদর্শ মানুষকে অবশ্যই সত্যবাদী হতে হবে। রাসুল (সা.) বাল্যকাল থেকে সবার কাছে সত্যবাদী ও বিশ্বাসী হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি জীবনে কোনো মিথ্যা কথা বলেননি। রাসুল (সা.) ছিলেন সত্যবাদিতার মূর্ত প্রতীক। তিনি শুধু নিজে সত্যবাদী ছিলেন তা নয়; বরং তিনি তার উম্মতের লোকদেরও সত্য বলার নির্দেশ দিতেন। তিনি এক বাণীতে সত্যকে ধারণ করা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। রাসুল (সা.) সত্যবাদিতা সম্পর্কে বলেন, ‘সত্য হলো প্রশান্তি এবং মিথ্যা হলো সংশয়ের আধার।’ (তিরমিজি)

সততা যখন কোনো ব্যক্তির চরিত্রের ওপর আরোপিত হয় তখন তাকে বলা হয় সৎ। সততার অস্তিত্ব মননে। সততার ব্যবহারিক অভিব্যক্তি চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। কোনো ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র ভালো হলে তিনি সচ্চরিত্রের অধিকারী হন। অন্যদিকে নৈতিক চরিত্র খারাপ হলে তিনি দুশ্চরিত্রের অধিকারী হন। ইহলৌকিক জীবনে সমাজে আত্মসম্মান নিয়ে বসবাসের জন্য সত্যবাদিতা একটি অপরিহার্য গুণ, যা সবার থাকা উচিত।

সততার বিষয়টি অনেক ব্যাপক। সততা শুধু সত্য কথা বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং সত্য কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কাজকর্ম, আকিদা-বিশ্বাস সবকিছুতেই সততা অন্তর্ভুক্ত। মুমিনের চরিত্র স্বচ্ছ, তাই তারা সত্যবাদী। মুমিনরাই যে সত্যবাদী আল্লাহতায়ালা তা কোরআনের আয়াতে এভাবে বলেছেন, ‘তারাই তো মুমিন, যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি এবং তাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই সত্যবাদী লোক।’ (সুরা হুজুরাত ১৫) একজন মুমিন জীবনের সর্বাবস্থায় সত্যবাদিতার চর্চা করেন। বাস্তব ও প্রকৃত ঘটনাকে মুমিন কোনোরূপ বিকৃতি, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ব্যতিরেকে হুবহু অবিকল ভাষায় উপস্থাপন করে।

কথাবার্তা, কাজকর্ম, আচার-আচরণ সর্বক্ষেত্রেই সত্যবাদিতা ও সততা অবলম্বন করে।

সত্যবাদিতা মানুষের জীবনে চিরমুক্তি ও কল্যাণের পথনির্দেশক। সত্যের অনুসরণে জীবন সুন্দর হয়। একজন সত্যবাদী মানুষ সর্বক্ষেত্রেই প্রশংসিত। সবার কাছেই সমাদৃত। সবাই তাকে বিশ্বাস করে। সত্যবাদিতা পবিত্র জীবনযাপন করার মৌলিক ভিত্তি। সত্যবাদী ব্যক্তি আত্মমর্যাদাশীল হয়। ফলে সে বহু অনৈতিক ও অন্যায় কাজ থেকে অনায়াসেই বেঁচে থাকে। সত্যবাদী মানুষের জীবন হয় ফুলের মতো সৌরভময়। ফুল যেমন তার হৃদয়কাড়া সুরভী দিয়ে চারপাশটা মোহিত করে রাখে, তদ্রুপ একজন সত্যবাদী মানুষ সত্যবাদিতার সৌরভ ছড়িয়ে পরিবার ও সমাজকে মোহিত করে রাখে। সত্যবাদিতার কারণে একজন মুমিন দুনিয়া ও আখেরাতে অশেষ ও অঢেল কল্যাণ লাভ করে। কেয়ামতের দিন মুমিনের সত্যবাদিতা তাকে বিশেষ সহায়তা দান করবে। তাকে এর প্রতিদান হিসেবে জান্নাত দান করা হবে।

অনেক সৎগুণের সমষ্টি হলো সততা। অসংখ্য হাদিসে সততার গভীরতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আবু সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়তের বিশুদ্ধতা ও সততার সঙ্গে আল্লাহর কাছে শহীদি মৃত্যু কামনা করে, মহান আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেন। যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।’ (সহিহ মুসলিম)

ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যাবতীয় লেনদেনে সততার নীতি অবলম্বনের ফলে বরকত নাজিল হয়। সত্যবাদী ব্যবসায়ী সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি ক্রেতা-বিক্রেতা সত্য বলে এবং ভালো-মন্দ প্রকাশ করে দেয়, তাহলে তাদের লেনদেন বরকতময় হবে। আর যদি উভয়ে মিথ্যা বলে এবং দোষত্রুটি (পণ্যের) গোপন করে, তাহলে এ লেনদেন থেকে বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে।’ (সহিহ মুসলিম)

সৎলোকের সততার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে অসৎ ও মন্দলোকও তার জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বাল্যকাল থেকেই সততা ও সত্যবাদিতার জন্য সবার প্রিয়পাত্র ছিলেন। ডাকাত দলের হাতে ধরা পড়েও তিনি মিথ্যার আশ্রয় নেননি। ফলে বালক আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর সততায় মুগ্ধ হয়ে ডাকাত দল ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হয়ে যায়।

সততার বিপরীত চরিত্র হলো মিথ্যা। মিথ্যা মানবজীবনের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম বদ অভ্যাস। মানুষের ব্যক্তিজীবন উন্নতির বিনাশক। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। তিলে তিলে গড়ে তোলা সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবনকে মুহূর্তেই সে ধসিয়ে দেয়। মিশিয়ে দেয় মান-সম্মান। মিথ্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সীমালঙ্ঘনকারী, মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত ব্যক্তিকে হেদায়েত দান করেন না।’ (সুরা মুমিন ২৮) মিথ্যা কথা মানুষকে ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে নামিয়ে দেয় এবং ইমান শূন্য করে দেয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন মানুষ যে নিয়মিতভাবে মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা ও প্রতারণাকেই নিজের কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে, তার হৃদয়ে একটি কালো দাগ স্থায়ীভাবে বসিয়ে দেওয়া হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা গোটা হৃদয়কেই কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেয়। আর তখনই তার নামটি মিথ্যাবাদীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’ (তিরমিজি)

মানুষ আল্লাহরতায়ালার পরম ভালোবাসার সৃষ্টি। তাই মানুষের হেফাজতের জন্য তিনি রহমতের ফেরেশতা নিয়োজিত রাখেন। মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে, রহমতের ফেরেশতারা তখন তার সঙ্গে থাকতে পারে না। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা মিথ্যা কথা বলে, তখন তার মিথ্যা কথার দুর্গন্ধে ফেরেশতারা তার কাছ থেকে এক মাইল দূরে চলে যায়।’(তিরমিজি)

মিথ্যা যাবতীয় অন্যায়-অপরাধের মূল উৎস। মিথ্যার চর্চা ও প্রচলনের ফলে মুসলিম সমাজে প্রতারণার মতো নৈতিক অধঃপতন ও বিকৃতি দেখা দেয়। দুনিয়ার যত পাপ তা মিথ্যা থেকেই উদ্ভূত হয়। মিথ্যা মানুষকে মোহমুগ্ধ করে সত্য থেকে দূরে নিয়ে যায়। আর সত্য তখন মিথ্যার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সত্যের সঙ্গে মিথ্যার মিশ্রণ করো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না।’ (সুরা বাকারা ৪২)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সত্য বলো, যদিও তা তিক্ত হয়।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান) সত্য কথা বলা ব্যতিরেকে কেউই প্রকৃত মুমিন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে পারে না। সত্য কথা না বললে ইবাদতে স্বাদ ও মজা অনুভূত হয় না। জীবন থেকে ইবাদতের স্বাদ ও মজা হারিয়ে যায়। ইবাদতগুলো প্রাণহীন হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সব সময় খারাপ চিন্তা থেকে দূরে থাকবে। কারণ খারাপ বা অশ্লীল চিন্তাই হলো সবচেয়ে বড় প্রতারণা, সবচেয়ে বড় মিথ্যা।’(মুসনাদে আহমদ) একজন মুসলমান কখনোই বিপদের আশঙ্কায় সত্য বলতে ভয় পেতে পারে না। বরং তার উচিত সাহসিকতার সঙ্গে সত্য কথা বলা; যেন কখনোই সে মিথ্যা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে না যায়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধরো। যদি তোমরা তাতে তোমাদের বিপদের আশঙ্কা দেখো তথাপিও সত্যকে ছেড়ে দিয়ো না। কারণ সত্যের পথে থাকলেই তোমরা কাক্সিক্ষত মুক্তির সন্ধান পাবে।’ কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য ও সঠিক কথা বলো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কর্মসমূহকে সংশোধন করে দেবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে।’ (সুরা আহজাব ৭০-৭১)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কেউ কোনো বাচ্চাকে নিছক ভোলানোর জন্য কোনো কিছু দেওয়ার কথা বলো; কিন্তু পরে আর না দাও, তাহলে সেটি একটি মিথ্যা হিসেবেই গণ্য হবে।’(মুসনাদে আহমদ)

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION